চবি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি)বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মাঝে ডোর্স ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি বাংলাদেশের(ডিআইএসবিডি) উদ্যোগে আরবি ব্রেইল প্রশিক্ষণ উদ্ভোধন, শিক্ষা বৃত্তি প্রদান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার দুপুর বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় ডিআইএস’র চবি ইউনিটের আহ্বায়ক মো. রাকিবুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে ও মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিআইএস’র কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম ফেরদৌস আলম ও চবি আইন বিভাগের অধ্যাপক ড.আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়াও এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আরবি ভাষা শিক্ষার সুবিধার্থে এগারো জন শিক্ষার্থীর হাতে আরবি কায়েদার ব্রেইল, ছয়জন শিক্ষার্থীকে নগদ ছয় হাজার টাকা ও দুইজনের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য আরবি ব্রেইল প্রশিক্ষণের উদ্ভোধন করা হয়।
ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থী মাজেদুল হক মুন্না অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আজকে আমার থেকে আনন্দ লাগতেছে। আমরা যখন কিনা এই ডিজিটাল দেশে পিছিয়ে পড়েছিলাম তখন এই ডোর্স ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি বাংলাদেশ (ডিআইএসবিডি) সংগঠনটি আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে আমরা উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা বলতে চাই এই সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের চাকরি ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের সবার জন্য সব সময় পাশে থাকতে হবে।
দর্শন বিভাগের বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিন বলেন, আমরা ডোরস্ ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি বাংলাদেশ (ডিআইএসবিডি) সংগঠনের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। আমরা তাদের কাছে দাবি করছি এখন যেমন করে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে ভবিষ্যতেও যেন এমন ভাবে আমাদের পাশে থাকে।
(ডিআইএসবিডি) এর চট্টগ্রাম শাখার
যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবিদুর রহমান বলেন, সারা বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষদের নিয়ে আমরা কাজ করি। আমরা চাই সকল মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হোক। বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষ যেন দেশের উন্নয়ন কাজে অবদান রাখতে পারে তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেইল কোরআন শরীফ প্রশিক্ষণ দেওয়া অসচ্ছল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছি।
বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানে সব মানুষকে সমান অধিকার দেওয়া আছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষ নিজেদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সমান সুযোগ পাচ্ছে না। এটা হলো রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। তবে রাষ্ট্র তাদের সমান অধিকার না দিতে পারলেও বাংলাদেশে যে সকল সেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে তারা বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে। যেমন আজকে দেখতেছি ডোর্স ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি বাংলাদেশ (ডিআইএসবিডি)
সংগঠনটিকে। আমি এই কারণে এই আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করে তারা কোন মেধাহীন নয় অনেক সময় তারা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের থেকেও মেধাবী হয়। আমাদের এই বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীরা একটু সহযোগীর অভাবে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনা।
ডোর্স ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি বাংলাদেশ (ডিআইএসবিডি) সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস. এম. ফেরদৌস আলম বলেন, আমি এই প্রোগ্রামে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। বিভিন্ন সংগঠন মানুষদের কম্পিউটার কোর্স করায় পরবর্তীতে তারা চর্চার অভাবে ভুলে যায়। আমরা ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২৪টি কম্পিউটার সহায়তা করি এবং সাথে তাদেরকে কোর্সের মাধ্যমে শিখিয়ে দিয়ে থাকি। আমরা (ডিআইএসবিডি) পক্ষ থেকে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করি।
আমরা লালমনিরহাটে দুইটা মিনি গার্মেন্টস করতেছি। সেখানে অনেক বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ লোকের কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। আপনাদের যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় আমাদের কাছে নক করবেন আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও (ডিআইএসবিডি)
এর চট্টগ্রাম ইউনিটের আহ্বায়ক মো. রাকিবুল ইসলাম সরকার বলেন, আপনারা কখনও নিজেদের মাঝে সংকোচবোধ করবেন না। আমরা আপনাদের সকল প্রয়োজনের কথা (ডিআইএসবিডি) এর সাথে শেয়ার করবো। আপনারা না বললে উনারা কি করে আমাদের পাশে দাড়াবে?
উল্লেখ্য,২০১৭ সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এস.এম ফেরদৌস আলমের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষদের সহায়তা করার উদ্দেশ্য কয়েক জন বন্ধু নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ডোর্স ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি বাংলাদেশ (ডিআইএসবিডি)
সংগঠনটি।